কিভাবে সরকারিভাবে দ.কোরিয়া যাওয়া যায়?

সরকারিভাবে স্বল্প খরচে দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রতিবছর চাকরি করতে যান শত শত বাংলাদেশি। কিন্তু কিভাবে কী করতে হবে বিষয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন থেকে যায়। সরকারিভাবে কোরিয়া যাওয়ার এই প্রক্রিয়াকে Employment Permit System সংক্ষেপে EPS বলা হয়ে। এ প্রক্রিয়ার বাংলাদেশ থেকে জনবল প্রেরণের দায়িত্বে রয়েছে Bangladesh Overseas Employment & Services Ltd যাকে সংক্ষেপে বোয়েসেল (BOESL) নামে সবাই চিনে। সরকারিভাবে দ.কোরিয়া যেতে এই যাবতীয় প্রক্রিয়া বোয়েসেলের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হয়।

সাধারণত সরকারি ব্যবস্থাপনায় বোয়েসল বাংলাদেশ থেকে দুইভাবে কর্মী বাছাই করে থাকে।

  1. লটারি সার্কুলার দিয়ে পরীক্ষার্থী বাছাই
  2. ভাষা পারদর্শী সার্কুলারের মাধ্যমে পরীক্ষার্থী বাছাই

উল্লেখ্য, লটারি পাওয়া মানে কোরিয়ান ভিসা পাওয়া না। লটারি পাওয়া মানে ভাষার উপর পরিক্ষা দেয়ার সুযোগ পাওয়া। ভাষা পারদর্শী কিংবা উভয় পদ্ধতিতেই আপনাকে পরিক্ষায় অংশগ্রহণ করে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করে তালিকা বদ্ধ হতে হবে।

প্রাথমিক যোগ্যতা ও শর্তাবলী

১। কোরিয়ান ভাষা পড়া, লেখা ও বোঝার পারদর্শিতা থাকতে হবে;

২। শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি/সমমান;

৩। বয়স সীমা ১৮ থেকে ৩৯ বছর (জন্ম তারিখ মার্চ ৪, ১৯৮৫ হতে মার্চ ৪, ২০০৬ এর মধ্যে হতে হবে);

৪। পাসপোর্ট-এর মেয়াদ ৪ মার্চ ২০২৪ পর্যন্ত হালনাগাদ থাকা সাপেক্ষে;

৫। পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যের সঙ্গে নাম ও জন্ম তারিখ এবং ছবির মিল থাকতে হবে;

৬। পোশাক-পরিচ্ছদ, আচার-আচরণ ও কথোপকথনে অবশ্যই মার্জিত হতে হবে;

৭। 3D (Dirty, Difficult and Dangerous) কাজ করার আগ্রহ থাকতে হবে;

৮। কালার ব্লাইন্ডনেস বা রঙ বোঝার সক্ষমতার সমস্যা মুক্ত হতে হবে;

৯। মাদকাসক্ত/সিফিলিস শনাক্ত ব্যক্তিগণ অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন;

১০। ফৌজদারি অপরাধে জেল বা অন্য কোনো শাস্তি প্রাপ্ত ব্যক্তিগণ অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন;

১১। দক্ষিণ কোরিয়ায় অবৈধভাবে অবস্থানকারীগণ অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন;

১২। দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আছে এমন ব্যক্তিগণ অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন এবং

১৩। ই-৯ বা ই-১০ ভিসায় কোরিয়াতে ৫ বছরের বেশি অবস্থানকারীগণ অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।

এই যোগ্যতা থাকলে যেকোনো সার্কুলারে আবেদন করে নির্বাচিত হলে পরিক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন।

ধাপসমুহ

১ম ধাপঃ

EPS সিস্টেমে এই যাত্রার প্রথম ও প্রধান শর্ত হল, কোরিয়ান ভাষার উপর দক্ষতা থাকা। এই ভাষাই আপনার ইপিএস যুদ্ধের প্রধান হাতিয়ার। আপনি যেকোনো ভাবেই ভাষা শিখতে পারেন। সরকার স্বীকৃত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অথবা প্রাইভেট কোচিং সেন্টারে কিংবা যথেষ্ট মেধাবি হলে নিজে নিজেও শেখা যেতে পারে ৷ তারপর নির্দিষ্ট সময়ে পরিক্ষায় অংশগ্রহণ করবেন। ইউবিটি সিস্টেমে এমসিকিউ পদ্ধতিতে ভাষার উপর পরীক্ষা হয়। দুই ধরণের এমসিকিউ থাকে। ১) রিডিং ২) লিসেনিং

২য় ধাপ:

কোরিয়ান ভাষা শেখার পর আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে সার্কুলারের। সার্কুলার BOESL এর মাধ্যমে বিভিন্ন পত্রিকাতে ও বোয়েসেল ওয়েবসাইটে সেই সাথে BOESLএর ফেইসবুক পেইজে পাবলিশ হবে। সার্কুলার হলে আপনাকে প্রাথমিকভাবে অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। অনলাইনে রেজিস্ট্রাশন করতে হলে কি কি যোগ্যতা থাকতে হবে তা স্পষ্ট করে সার্কুলারে লেখা থাকবে। বিস্তারিত পড়ে নিলেই হবে।

৩য় ধাপঃ

এবার আপনার কাজ হচ্ছে আবেদন করা। কম্পিউটার হলে নিজেই করা যায় আবার এন্ড্রয়েড ফোন দিয়েও করা যায়। না পারলে যেকোনো কম্পিউটারের দোকানে গিয়ে রেজিস্ট্রেশন সম্পূর্ন করতে হবে।তবে এর চেয়ে বেটার হবে যদি কোনো কোচিং সেন্টার থেকে করতে পারেন। রেজিস্ট্রেশন এর জন্যে বোয়েসেল নির্ধারিত ফি বিকাশের মাধ্যমে জমা দিয়ে ট্রানজেকশন আইডি সংরক্ষণ করতে হয়, আবেদন সম্পূর্ণ হলে আপনাকে একটা প্রিন্ট কপি দেওয়া হবে। সাথে একটা সিরিয়াল নাম্বার থাকবে, যা আপনাকে পরবর্তী অনুসন্ধাণের জন্য সংরক্ষণ করতে হবে।

৪র্থ ধাপঃ
যদি চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি রেজিস্ট্রেশন হয়, তখন সব রেজিস্ট্রেশন থেকে কোটা সমপরিমান লোক লটারির মাধ্যমে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়ে থাকে। এই লটারিতে অনেকে ভাষা না জানা ব্যাক্তিরা চান্স পেয়ে যায় আবার ঠিক তেমনি ভাষার ওপর ভালোভাবে পড়াশুনা করা দক্ষ ব্যাক্তিরাও বাদ পড়ে যায়। এটি সম্পূর্ণ কম্পিউটারাইজড সিলেকশন, যা HRD কোরিয়া করে থাকে, সুতরাং আপনার বা অন্য কারো ক্ষমতা থাকে না। তবে আমার পরামর্শ ভাষা না জানা ব্যক্তিরা আবেদন থেকে বিরত থাকাটাই জাতির জন্য ভালো।

৫ম ধাপঃ
আপনি যদি লটারিতে নির্বাচিত হোন তাহলে নির্দিষ্ট সময়ে সব ধরনের কাগজপত্র সাথে নিয়ে আপনাকে স্বশরীরে বোয়েসেল গিয়ে মূল রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। এই রেজিস্ট্রেশন প্রাপ্ত সিরিয়াল নম্বর আপনাকে সবসময় সংরক্ষণ করতে হবে। অনলাইন থেকে এডমিট কার্ড সংগ্রহ করতে হবে। সবকিছু ঠিকঠাক করে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।

৬ষ্ঠ ধাপঃ
এবার আপনাকে EPS-TOPIK পরিক্ষায় অংশগ্রহন করতে হবে। UBT (Ubiquitous Based Test) সিস্টেমে পরীক্ষা হবে। ট্যাবের সামনে বসে রিডিং ও লিসেনিং একসাথে পরীক্ষা দিতে হবে। পরিক্ষার শেষে নিজে যে ডিভাইসে বসে পরিক্ষা দিলেন সেই সেটাতেই নিজের প্রাপ্ত নম্বর জানা যাবে। [একদম পরিক্ষা শেষে] তাই একটু বসে থাকতে হবে। পরীক্ষা অপেক্ষাকৃত ভালো হলে পরবর্তী ধাপে এগোতে হবে।

৭ম ধাপঃ
কোরিয়ান ভাষা পরীক্ষার পর স্কিল টেস্ট নামে আরও একটি পরীক্ষা হবে। স্কিল টেস্ট কেমন ও কিভাবে হবে তা অভিজ্ঞ ইন্সট্রাক্টরের কাছ থেকে জেনে নিতে হবে। সাধারণত ভাইবা ও স্কিল টেস্ট অর্থাত আপনার ক্যাটগরি অনুযায় ছোটখাটো কাজের দক্ষতা যাচাই করা হয় এই ধাপে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *